F গত ২৪ ঘণ্টায় বাজ পড়ে বর্ধমানে মৃত ৬, জখম ৪! প্রাণ হাতে জমিতে যাচ্ছেন কৃষকেরা, উপায়?
Newsletter image

Subscribe to the Newsletter

Join 10k+ people to get notified about new posts, news and tips.

Do not worry we don't spam!

গত ২৪ ঘণ্টায় বাজ পড়ে বর্ধমানে মৃত ৬, জখম ৪! প্রাণ হাতে জমিতে যাচ্ছেন কৃষকেরা, উপায়?



গত ২৪ ঘণ্টায় বাজ পড়ে বর্ধমানে মৃত ৬, জখম ৪! প্রাণ হাতে জমিতে যাচ্ছেন কৃষকেরা, উপায়?

দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে টানা বর্ষণ। গত ২৪ ঘণ্টায় বর্ধমানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩২ মিলিমিটার। জল জমেছে যত্রতত্র। তার মধ্যে বজ্রপাত আতঙ্কে ত্রস্ত পূর্ব বর্ধমান জেলা।

অবিশ্রান্ত বৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজ পড়ছে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ক্রমাগত বজ্রপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই বাজ পড়ে ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছেন চার জন। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা এলাকায় বজ্রাঘাতে আহতের সংখ্যা পাঁচ। তাঁদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।

বিজ্ঞান এগোচ্ছে। প্রযুক্তি হাতের মুঠোয়। তবু কেন রোখা যাচ্ছে না বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা? গ্রামীণ বাংলায় এটাই ধান রোয়ার সময়। খরিফ চাষের এই সময় ‘শস্যগোলা’ বর্ধমানে চাষিদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। সারা বছর অন্যদের অন্ন জোটাতে এখন প্রাণ হাতে করে মাঠে যাচ্ছেন তাঁরা। বস্তুত, বজ্রাঘাতে মৃতদের অধিকাংশই খেতমজুর। স্থানীয় সূত্রে খবর, পূর্ব বর্ধমানে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে মাধবডিহির সনাতন পাত্রের (৬০)। এ ছাড়া রয়েছেন আউশগ্রামের বেলারি গ্রামের বাসিন্দা রবীন টুডু (২৫), রায়না-১ ব্লকের তেয়াণ্ডুল গ্রামের বাসিন্দা অভিজিৎ সাঁতরা (২৫), মঙ্গলকোটের চানক কৃষ্ণপুর গ্রামের বুড়ো মাড্ডি (৬৪), খণ্ডঘোষের শেরপুর গ্রামের পরিমল দাস (৩২) এবং গলসি-১ ব্লকের ফতেপুর গ্রামের মদন বাগদি (৬৮)। মৃতদের কেউ চাষি কেউ খেতমজুর। মৃতদেহগুলি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার সকালে মাধবডিহির আলমপুরের মাঠে চাষের কাজ করার সময় বজ্রাঘাতে জখম হয়ে জমিতে লুটিয়ে পড়েন সনাতন পাত্র। আলমপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। একই সময়ে আউশগ্রামের রবীন টুডু গুসকরা-২ পঞ্চায়েতের দেয়াশা গ্রামের মামার জমিতে ধান গাছ রোয়ার সময় বজ্রপাতে মারা যান অভিজিৎ। বজ্রপাতে জখম চার জন ভাতারের ভূমশোর গ্রামের বাসিন্দা। অন্য দিকে, চন্দ্রকোনা রোড এলাকায় বাজ পড়ে আহত হয়েছেন একই পরিবারের তিন জন। তাঁদের সকলে দ্বারিগেড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাঁদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। অন্য দিকে, কদমডিহা এলাকায় বাজ পড়ে আহত হন ৬৫ বছরের অনিল মাঝি।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সচেতনতার কিছুটা অভাব। প্রচারেও ঘাটতি রয়েছে। কী রকম? তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রামবাংলায় এক সময় বাজনিরোধী তালগাছ প্রচুর দেখা যেত। কিন্তু হালে তালগাছের সংখ্যা এত কম হয়েছে যে, কহতব্য নয়। এখন খুব নগন্য। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নারায়ণচন্দ্র জানা বলেন, ‘‘পরিবেশের প্রতি অবহেলা, সরকারি স্তরে দায়সারা মনোভাব এ সবের জন্য দায়ী। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে গুরুত্ব না দেওয়াও এর কারণ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগে মূলত বর্ষাকালে বজ্রপাত হত। এখন সারা বছরে যখনই বৃষ্টি হচ্ছে, তখনই বাজ পড়ছে। লাগামছাড়া দূষণ এবং উষ্ণায়ন এর জন্য দায়ী।’’ অধ্যাপক জানান, সরকারি স্তরে চেষ্টা চলছে। মেট্রোলজিকাল বিভাগ কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। পঞ্চায়েত স্তরে দামিনী অ্যাপ নিয়ে নিরন্তর প্রচারে সুফল মিলতে পারে। তা ছাড়া গ্রামে এখন স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়েছে। এই সুবিধা কাজে লাগাতে হবে প্রশাসনকে।

বিদ্যুৎ বিভাগের ফিল্ড স্টাফ ও বৃক্ষপ্রেমী সুফি আলম মুন্সি পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে বটগাছ লাগিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘অন্য গাছ অনেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লাগাচ্ছে। তবে তালগাছ নিয়ে সচেতনতা কম। কোভিডের সময় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পূর্ব বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরে তাল আঁটি রোপন করেছিল। তালগাছ বেশি জায়গা নেয় না। অনাদরে বড় হয়। তা সত্ত্বেও মানুষ এই গাছটির কদর করছেন না।’’

বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় বলেন, ‘‘এই ঘটনা মর্মান্তিক। জনস্বার্থে নানা ভাবে প্রচার বাড়ানো হবে। সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ করা হবে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মেনে চলুন। বাজ পড়লে বাইরে থাকবেন না। দ্রুত কোথাও আশ্রয় নিতে হবে। সাবধান হলে এই ঘটনা কমে আসবে।’’

Related to this topic:

Comments

Leave a Comment