F জয় শ্রীরাম’ ছেড়ে দুর্গা-কালীর নামে জয়ধ্বনিতে বঙ্গের বিজেপি অভ্যস্ত হতে পারবে? জবাবে ‘তেজ’ দেখাচ্ছেন সভাপতি
Newsletter image

Subscribe to the Newsletter

Join 10k+ people to get notified about new posts, news and tips.

Do not worry we don't spam!

জয় শ্রীরাম’ ছেড়ে দুর্গা-কালীর নামে জয়ধ্বনিতে বঙ্গের বিজেপি অভ্যস্ত হতে পারবে? জবাবে ‘তেজ’ দেখাচ্ছেন সভাপতি



জয় শ্রীরাম’ ছেড়ে দুর্গা-কালীর নামে জয়ধ্বনিতে বঙ্গের বিজেপি অভ্যস্ত হতে পারবে? জবাবে ‘তেজ’ দেখাচ্ছেন সভাপতি

দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘সব বলব। কিন্তু জয় বাংলা বলব না।’’ সুকান্ত মজুমদার তৃণমূলকে ‘বাংলাদেশের স্লোগান আমদানি’ করার অভিযোগ তুলে কটাক্ষ করেছেন। শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘মা দুর্গার তেজ চাই।’’

সর্বোচ্চ নেতা মঞ্চ থেকে বলেছিলেন ‘জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা’। জমায়েত করতালিতে স্বাগত জানিয়েছিল। পাশাপাশিই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল বঙ্গ বিজেপির ‘বাঙালিয়ানা’ অনুশীলন নিয়ে। কিন্তু সে সব ছাপিয়ে এ বার শুরু হয়েছে পশ্চিবঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির ভবিষ্যৎ আলোচনা। মঞ্চায়ন পটু নরেন্দ্র মোদী সাবলীল ভাবেই উচ্চারণ করে গিয়েছেন নতুন স্লোগান। বিজেপির সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা কি অত সহজে ‘জয় শ্রীরাম’ ছেড়ে ‘জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা’ উচ্চারণ করতে পারবেন? স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সেই পরিবর্তন আসবে?

এই প্রশ্নকে বিজেপির জন্য আরও ‘অস্বস্তিকর’ করে তুলছে তৃণমূলের লাগাতার কটাক্ষ। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘২০২৬ সালের নির্বাচনের পরে ওদের দিয়ে ‘জয় বাংলা’ও বলাব!’’

অভিষেকের মন্তব্যের জবাবে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘সব বলব। কিন্তু জয় বাংলা বলব না।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আরও এক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তৃণমূলকে ‘বাংলাদেশের স্লোগান আমদানি’ করার অভিযোগ তুলে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘জয় মা কালী বা জয় মা দুর্গা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নিজস্ব স্লোগান। তৃণমূলের তাতে অসুবিধা হতে পারে। কারণ, ওরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে আপন করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ওরা এখন পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে বাংলাদেশের হয়ে গিয়েছে।’’

দুর্গাপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী পৌঁছোনোর আগে পর্যন্ত বিজেপির জমায়েত মুহুর্মুহু ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলছিল। কিন্তু ভাষণের শুরুতেই মোদী রামের পরিবর্তে ‘মা কালী’ এবং ‘মা দুর্গার’ নামে জয়ধ্বনি দেন। বস্তুত, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল এলাকায় এর পটভূমি কয়েক দিন আগে থেকেই তৈরি করা হচ্ছিল। বাড়ি বাড়ি যে ‘পত্রক’ বিলি করে সাধারণ জনতাকে মোদীর সভায় যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছিল, তাতেও ‘জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা’ই লেখা ছিল। অর্থাৎ, মোদী যে দুর্গাপুরের ভাষণে কালীনাম-দুর্গানাম জপবেন, তা আগে থেকেই স্থির হয়ে গিয়েছিল।

মোদীর সভার অব্যবহিত পরে ‘রাম’ প্রসঙ্গে অন্য এক বিতর্ক বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়েছিল। বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল রামের উল্টো ছবি দেওয়া শাড়ি পরে মোদীর সভায় গিয়েছিলেন। তৃণমূল তা নিয়ে তোপ দাগে। রামের প্রতি সামগ্রিক ভাবে বিজেপির ‘শ্রদ্ধা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। শেষে অগ্নিমিত্রাকে সমাজমাধ্যমে লিখিত দুঃখপ্রকাশ করতে হয়। তিনি লেখেন, ‘আমি কখনওই কারও ভাবাবেগে আঘাত দিতে চাইনি। এই শাড়িটি আমার ভক্তির প্রকাশ, আমার আত্মার আরাধনা। রামের নাম, রামের চরণ, আমার জীবনের পথপ্রদর্শক— এই পোশাকে আমি তাঁকে বহন করি হৃদয়ে, শ্রদ্ধায়, প্রেমে। যদি কারও অনুভূতিতে অনিচ্ছাকৃত আঘাত লেগে থাকে, আমি দুঃখিত।’

কিন্তু সে বিতর্ক মিটতে না মিটতেই ‘রামনাম’ জপ দূরে ঠেলা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে বিজেপির অস্বস্তি কাটছে না। প্রশ্ন নানাবিধ। এত দিন ‘জয় শ্রীরামে’ অভ্যস্ত বিজেপি কর্মীরা কি সহজে অন্য স্লোগানে অভ্যস্ত হতে পারবেন? যদি বাংলার বিজেপি কর্মীরা ‘রামনাম’ ছেড়ে ‘কালীনাম-দুর্গানামে’ সরে যান, তা হলেও প্রশ্ন উঠবে, ‘রামভক্তি’ কি স্রেফ ভোট পাওয়ার কৌশল? রামনামের সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে নেই?

রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য প্রশ্নের ‘বিশ্বাসযোগ্য’ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মা কালী আর কলকাতা সমার্থক। কারণ, এটা মা কালীর পীঠ (কালীঘাট)। আর মা দুর্গার আরাধনা আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। আমরা মায়ের নাম নেব, এটাই তো স্বাভাবিক’!’’ তা হলে এত দিন ‘জয় শ্রীরাম’ বলতেন কেন? শমীকের জবাব, ‘‘এত দিন বলতাম মানে আবার কী? এখনও তো বলছি! রাম মানে ভারত, ভারত মানে রাম। মা কালী আর মা দুর্গার নাম নিলে রামের নাম ছাড়তে হবে কে বলল? বাঙালি তার শ্রেষ্ঠ উৎসব পেয়েছে রামচন্দ্রের করা অকালবোধনেই।’’

বস্তুত, রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টাও করছেন। বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ বঙ্কিমচন্দ্রের কথা মনে পড়ছে। বলছেন, বঙ্কিমের বাংলা। সেই বঙ্কিম-রচিত ‘বন্দেমাতরম’ যখন দিল্লির সব স্কুলে গাওয়ানো হবে বলে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী মদনলাল খুরানা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন কংগ্রেস তার বিরোধিতা করেছিল। মমতা তখন কংগ্রেসে ছিলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। একবারও বঙ্কিম-বিরোধিতার প্রতিবাদ করেছিলেন?’’ শমীকের কথায়, ‘‘বঙ্কিম লিখেছিলেন, ‘ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী’। কারণ, তখনকার পরিস্থিতিতে মা দুর্গার তেজের প্রয়োজন ছিল। এখন আবার সেই তেজ জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই দুর্গানাম নিচ্ছি।’’

তা এই তেজের প্রয়োজন কি ২০১৯, ২০২১ বা ২০২৪ সালে ছিল না? রাজ্য বিজেপি সভাপতির এক লাইনের জবাব, ‘‘তখনকার চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ।’’

Related to this topic:

Comments

Leave a Comment